বাংলাদেশের প্রকৃতি ও জলাভূমির অনন্য সৌন্দর্যের প্রতীক টাঙ্গুয়ার হাওর এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে হাউসবোটে থাকা এবং পানির বুকে ভেসে ভেসে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘোরা—এই অভিজ্ঞতা অনেকের জন্যই নতুন এবং রোমাঞ্চকর। তবে কীভাবে হাউসবোট বুক করবেন, খরচ কত পড়বে, কোথা থেকে শুরু করবেন—এসব প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘোরাফেরা করে। চলুন, খুঁটিনাটি সব জেনে নিই এই লেখায়।
যাত্রা শুরু: কোথা থেকে যাবেন?
টাঙ্গুয়ার হাওর যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলায়। ঢাকা থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জে এনা, হানিফ, শ্যামলী ইত্যাদি বাস চলাচল করে।
- ভাড়া: নন-এসি বাসে জনপ্রতি প্রায় ৮০০–৮৫০ টাকা।
সুনামগঞ্জ শহর থেকে রিকশায় ২০–৩০ টাকা খরচ করে পৌঁছাতে পারেন সাহেববাড়ি, বৈশাখালী বা ওয়েস্টখালী ঘাটে। কেউ কেউ সরাসরি তাহিরপুর বা আনোয়ারপুর ঘাট থেকেও যাত্রা শুরু করেন—সিএনজিতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগে।
হাউসবোট বুকিং: ঘাটে গিয়ে মিলবে?
না। টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রতিটি হাউসবোট কমপক্ষে দুই দিনের জন্যই ঘাট ছাড়ে এবং ঘাটে থাকা বোটগুলো সাধারণত রক্ষণাবেক্ষণ ও পরবর্তী ট্যুরের প্রস্তুতির কাজে থাকে। আপনি যদি সরাসরি ঘাটে যান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো ফাঁকা বা “রেডি টু গো” বোট পাবেন না। তাই আগেভাগেই হাউসবোট বুক করা একেবারে বাধ্যতামূলক।
হাউসবোটের সুবিধা ও বৈচিত্র্য
টাঙ্গুয়ার হাওরে বর্তমানে ৮০টিরও বেশি হাউসবোট চালু রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের সুবিধা:
- কেবিন বা খোলা ঘুমানোর ব্যবস্থা
- দরজাসহ লকযোগ্য কেবিন
- অ্যাটাচড ওয়াশরুম
- ব্যক্তিগত বারান্দা ও দোলনা
- কেবল লবি বা পুরো বোটে এসি সুবিধা
- পাঁচ বেলা খাবার (সকালের নাস্তা, দুপুর, রাতের খাবার, স্ন্যাকস, চা/কফি, ফল)
- কিছু বোটে ওয়েলকাম ড্রিংকস ও বাড়তি স্ন্যাকসও দেওয়া হয়
🔸 পরিবার নিয়ে গেলে কেবিন সুবিধা যুক্ত বোট বেছে নেওয়া ভালো।
🔸 বন্ধুবান্ধব বা ব্যাচেলর ট্যুর হলে খোলা বোটও মজাদার হতে পারে।
খরচ কেমন?
হাউসবোটের ভাড়া নির্ভর করে আপনার সুবিধা, গ্রুপ সাইজ এবং মৌসুমের উপর।
সাধারণভাবে, দুই দিন এক রাতের জন্য জনপ্রতি ভাড়া:
- সাধারণ বোট: ৫,০০০–৭,০০০ টাকা
- মাঝারি মান: ৮,০০০–১০,০০০ টাকা
- প্রিমিয়াম বোট: ১১,০০০–১৫,০০০ টাকা
🔹 ছুটির দিন বা সরকারি ছুটিতে ভাড়া কিছুটা বেড়ে যেতে পারে।
🔹 বড় গ্রুপে গেলে পার হেড খরচ অনেক কমে যায়।
কোন কোন জায়গা দেখা যাবে?
দুই দিনের হাউসবোট ট্যুরে আপনি দেখতে পারবেন:
- ওয়াচ টাওয়ার এলাকা:
ভাসমান জঙ্গল এবং পানিতে গোসলের সুযোগ। অনেকটা রাতারগুলের মতো অনুভূতি। - টেকেরঘাট ও নীলাদ্রি লেক (শহীদ সিরাজ লেক):
সবুজ ঘাসে ঢাকা টিলা ও পাশেই ভারতের পাহাড়—দর্শনীয় এক ল্যান্ডস্কেপ। - লাকনামা ছড়া (বাইক ভাড়া: ১০০ টাকা)
হাওরের পাশেই একটি স্বচ্ছ পানির ঝর্ণা ও ঝরনাধারার মতো দৃশ্য। - জাদুকাটা নদী ও শিমুল বাগান (প্রবেশ টিকিট: ৩০ টাকা):
এক পাশে শিমুলবাগান, অন্য পাশে ভারতের পাহাড় বেয়ে ঝর্ণা—অত্যন্ত মনোরম। - বারিক টিলা:
এখান থেকে নদী ও পাহাড়ের যুগল দৃশ্য একসঙ্গে দেখা যায়।
বুকিংয়ের আগে কিছু টিপস
- কমপক্ষে ৭ দিন আগে বুকিং করুন
- বোটের ছবিসহ বিস্তারিত সুবিধা চেক করুন
- ক্যান্সেলেশন পলিসি জেনে নিন
- আবহাওয়া অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন (রেইনকোট, স্যান্ডেল, সানগ্লাস, ড্রাই ব্যাগ)
- লাইফ জ্যাকেট ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশ্ন করতে দ্বিধা করবেন না
উপসংহার
টাঙ্গুয়ার হাওর শুধু একটি জলাভূমি নয়—এটি প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। হাউসবোটে দুই দিন এক রাত থাকা মানে একেবারে জলবিলাসের নতুন স্বাদ। সুন্দর পরিকল্পনা ও আগাম বুকিংয়ের মাধ্যমে এই যাত্রা হতে পারে আপনার জীবনের সেরা কিছু মুহূর্তের একটি।
লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন এবং অন্যদেরও টাঙ্গুয়ার হাওরের জাদুকরী ভ্রমণ সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন।
I love to travel as a passion. Through traveling, I gather experiences, and I love to share them with you.